এলোপ্যাথিক ঔষধে ডায়াবেটিস নিমূর্ল হয় না
যদিও এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য বিরাট আলিশান এক হাসপাতালই তৈরী করে ফেলেছে, তথাপি সত্যি কথা হলো এলোপ্যাথিতে ডায়াবেটিসের কোন চিকিৎসাই নাই। তারা যা করেন অথবা বলা যায় তারা যা পারেন, তা হলো ডায়াবেটিসের তীব্রতা বা উৎপাত কমিয়ে রাখা, নিয়ন্ত্রণে রাখা। ডায়াবেটিস নির্মুল করা বা পুরোপুরি ভালো করার ক্ষমতা এলোপ্যাথিক ঔষধের নাই। তবে ডায়াবেটিস সৃষ্টি করার ক্ষমতা এলোপ্যাথিক ঔষধের আছে। আপনি যদি ইন্টারনেটে একটু খোঁজাখুঁজি করেন, তবে এমন হাজারো গবেষণা রিপোর্টের সন্ধান পাবেন, যাতে নিরপেক্ষ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, টিকা/ ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণেই মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। যখন থেকে মানুষকে পাইকারী হারে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে, তখন থেকেই পাইকারী হারে ডায়াবেটিস হওয়া শুরু হয়েছে। আগে জন্মের পর থেকে শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু হতো আর এখন শিশুরা মায়ের পেটে থাকতেই তাদের গর্ভধারীনী মাকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে প্রকারান্তরে শিশুদেরকেই টিকা দেওয়া হচ্ছে। ফলে মায়ের পেট থেকেই শিশুরা বিষাক্ত দেহ-মন নিয়ে দুনিয়ায় আগমণ করছে। তাই ইদানীং শিশুদের মধ্যেও ডায়াবেটিসের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে।
ভ্যাকসিন/ টিকা (vaccine) ছাড়াও ভয়ঙ্কর হাই-পাওয়ারের (?) ক্ষতিকর সব এন্টিবায়োটিক, সড়ক দুর্ঘটনায় বড় ধরনের শারীরিক আঘাত, ঘনিষ্ট কারো মৃত্যু বা পেশাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মাধ্যমে বড় ধরণের মানসিক আঘাত ইত্যাদির কুপ্রভাবে মানুষের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ শক্তির (immune system) বারোটা বেজে যায় ; ফলস্রুতিতে মানুষ ডায়াবেটিসের মতো জঘন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, ডায়াবেটিস আসলে কোন রোগ নয় বরং এটি একটি বিরাট লাভজনক ব্যবসা। দিন-রাতের অধিকাংশ সময় শুয়ে-বসে কাটানো শহরের অলস (এবং অন্যদিকে অতিমাত্রায় টিকা/ভ্যাকসিন ভক্ত) মানুষদের মধ্যে এই রোগ মহামারী আকারে দেখা না দিলে এ যুগের ডাক্তারদের পক্ষে এতো সহজে বাড়ি-গাড়ি-ব্যাংক ব্যালেন্স করা খুবই কঠিন হতো। ডায়াবেটিস থেকে প্রথমত সবচেয়ে বেশী লাভবান হয় ডায়াবেটিসের ঔষধ এবং ইনজেকশন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। কারণ ডায়াবেটিসের রোগীরা প্রায় সবাই কোন না কোন ঔষধ-ইনজেকশন নিয়ে থাকে। ঔষধ কোম্পানীর মালিক এবং তাদের সমর্থক ডাক্তাররা যোগসাজস করে ঘোষণা করেছে যে, রক্তে সুগারের মাত্রা ছয়ের চাইতে বেশী হলেই বিপদ।
আপনাকে ঔষধ খেতে হবে, ইনজেকশন নিতে হবে, নিয়মিত টেস্ট করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে এগুলো হলো মাল কামানোর ব্যবসায়িক পলিসি, ধাপ্পাবাজি। বাস্তবে দেখা যায়, কারো কারো সুগার ছয়-সাতে উঠলেই নানা রকম সমস্যা দেখা দেয় আবার কেউ কেউ দশ-পনের নিয়েও স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। একেক জন মানুষের শারীরিক গঠন একেক রকম আর তাই একই থিওরী সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হতে পারে না। দ্বিতীয়ত ডায়াবেটিস থেকে সবচেয়ে বেশী লাভবান হয় প্যাথলজীষ্টরা, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিকরা, এসব টেস্টের মেশিন-পত্র এবং রিয়েজেন্ট প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা। কারণ ডায়াবেটিসের রোগীরা সাধারণত ঘনঘন বিভিন্ন প্যাথলজীক্যাল টেস্ট করে থাকে। তৃতীয়ত সবচেয়ে বেশী লাভবান হয় ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা। চতুর্থত সবচেয়ে বেশী লাভবান হয় কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞরা (urologist), কারণ ডায়াবেটিসের রোগীদের সাধারণত কিডনীর রোগ বেশী হয়ে থাকে। পঞ্চমত সবচেয়ে বেশী লাভবান হয় চক্ষু বিশেষজ্ঞরা (oculist), কারণ ডায়াবেটিসের রোগীদের চোখের সমস্যা লেগেই থাকে। চর্ম-যৌন বিশেষজ্ঞরাও বেশ লাভবান হয়, কারণ ডায়াবেটিসের রোগীদের অনেকেরই যৌন দুর্বলতা/ ধ্বজভঙ্গ দেখা দিয়ে থাকে। ডায়াবেটিস থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরাও (cardiologist) কম লাভবান হন না, যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের হার্টের সমস্যা বেশী হতে দেখা যায়। এমনকি হরমোন বিশেষজ্ঞরাও বেশুমার রোগী পেয়ে থাকেন যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবেটিসে ভোগছেন তাদের মধ্যে থেকে। সার্জনরাও প্রচুর লাভবান হয়ে থাকে, কেননা ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায়ই হাত-পায়ে গ্যাংগ্রিন (gangrene), মারাত্মক আলসার (ulceration) ইত্যাদি দেখা দিয়ে থাকে।
স্মায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ (neurologist) এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরাও (psychiatrist) ডায়াবেটিস থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন, কেননা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভোগলে স্মায়ুঘটিত রোগ এবং মানসিক রোগ দেখা দিবেই। ডায়াবেটিসের কারণে কবিরাজরাও যথেষ্ট লাভবান হয়, কেননা অনেক রোগীরই কবিরাজি-ইউনানী-আয়ুর্বেদী চিকিৎসার প্রতি ভীষণ ভক্তি দেখা যায়। ডায়াবেটিসের কারণে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তাররাও বেশ লাভবান হয়, কারণ অনেকেরই হোমিও ঔষধের প্রতি অন্ধভক্তি আছে। তাছাড়া অনেকে বিশ-ত্রিশ বছর প্রচলিত চিকিৎসা করেও ডায়াবেটিসমুক্ত হতে না পারার কারণে হোমিও চিকিৎসা শুরু করে দেয়। আমার মুল বক্তব্য হলো, অন্যান্য পুরাতন রোগের (chronic disease) মতো ডায়াবেটিসেরও সবচেয়ে ভালো এবং সেরা চিকিৎসা আছে একমাত্র হোমিওপ্যাথিতে। নতুন আর পুরাতন দু'ধরণের ডায়াবেটিসেরই সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে আছে। ডায়াবেটিস হওয়ার মুল কারণ কি ? সাধারণ মানুষের বুঝার মতো ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, আমাদের শরীরের হজম শক্তি কমে যাওয়াই হলো ডায়াবেটিসের মুল কারণ। সাধারণ মানুষ যদিও মনে করে আমাদের খাদ্য-দ্রব্য পাকস্থলী বা পেটে হজম হয় কিন্তু তা একেবারেই ভুল ধারণা। পাকস্থলী এবং নাড়িভুড়িতে খাদ্য-দ্রব্য হজম হয় না বরং বলা উচিত শোষণ (absorb) হয়। সেখান থেকে শোষণ হয়ে রক্তের মাধ্যমে প্রতিটি কোষে কোষে পৌঁছে যায়।
আমাদের শরীরে যে কোটি কোটি কোষ আছে, খাদ্য-দ্রব্য হজমের কাজটি হয় সেই কোষগুলোতে। ডাক্তারী ভাষায় একে বলা হয় বিপাক ক্রিয়া (metabolism)। ইহার পরিমাপকে বলা হয় বিপাক ক্রিয়ার হার (BMR-basal metabolic rate)। কোষগুলোতে খাদ্য-দ্রব্য হজম হয়ে শক্তি তৈরী হয় যা দিয়ে আমাদের শরীরের সমস্ত কাজ-কর্ম চলে। তাই ডায়াবেটিস সমপুর্ণরূপে নির্মুল করতে চাইলে আমাদেরকে শরীরের হজম শক্তি বাড়াতে হবে অর্থাৎ কোষের বিপাক ক্রিয়ার হার বাড়াতে হবে। আর সত্যি কথা হলো, শরীরের বিপাক ক্রিয়ার হার বাড়ানোর ক্ষমতা কেবল দুটি হোমিও ঔষধের আছে। তার একটি হলো ক্যালকেরিয়া কার্বনিকাম (Calcarea carbonica) এবং অন্যটি হলো আয়োডিয়াম (Iodium)। এই দুইটি ঔষধ ছাড়া আকাশের নীচে এবং মাটির ওপরে আর এমন একটি ঔষধও নাই যেটি শরীরের বিপাক ক্রিয়ার হার বৃদ্ধি করতে পারে। যদিও শারীরিক-মানসিক-পারিবারিক-জলবায়ুজনিত লক্ষণ সমষ্টির উপর ভিত্তি করে প্রদত্ত যে-কোন হোমিও ঔষধেই ডায়াবেটিস সমপুর্ণ নির্মুল হয়ে যায়। তবে এই দুইটি ঔষধ হলো একেবারে সেপসিফিক। সত্যি বলতে কি ডায়াবেটিস আসলে একটি রোগ নয় ; বরং বলা যায় এটি অনেকগুলি রোগের সমষ্টি (group of diseases)। অথবা বলা যায় ডায়াবেটিসের পেছনে অনেকগুলো কারণ (Link) থাকে। ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নির্মূল করার জন্য প্রথমে এই কারণগুলিকে একটি একটি করে দূর করতে হয়। কিন্তু অন্যান্য বিভিন্ন পন্থী ডাক্তাররা এই কারণগুলো সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং এই কারণগুলো দূর করার ক্ষমতাও তাদের ঔষধের নাই। তাদের একমাত্র টার্গেট হলো রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে রাখা। ইদানীং আবার সে-সব ডাক্তাররা পেটুক রোগীদের শরীরে অপারেশন করে পাকস্থলী কেটে ছোট করে দিচ্ছে যাতে বেশী খেতে না পারে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ! এসব কাণ্ডকারখানা চিকিৎসার নামে নৃশংসতা ছাড়া কিছুই না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, খেজুর গাছের গোড়া না কেটে যতই অপারেশন-মলম-ট্যাবলেট-ইনজেকশান প্রয়োগ করা হউক না কেন, তাতে কিন্তু খেজুরের রসের উৎপাদন বন্ধ করা যাবে না।
রক্তে সুগারের মাত্রা কেন বাড়ে তা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নাই বরং সুগারের মাত্রা কিভাবে কমানো যায় তাই নিয়ে ব্যস্ত। ফলে সুগারের মাত্রা কন্ট্রোল করার জন্য তারা যে-সব ঔষধ/ ইনজেকশান রোগীদেরকে দেন, সেগুলো দুয়েক বছর কাজ করলেও তারপর আর কোন কাজ করে না। আমাদের শরীর এমনই অদ্ভূত ক্ষমতার অধিকারী যে, বিষাক্ত ঔষধকেও এক সময় সে হার মানিয়ে দেয়। ফলে ডাক্তাররা ধীরে ধীরে ঔষধ/ ইনজেকশানের মাত্রা বাড়িয়ে দেন কিন্তু তারপরও সুগারের মাত্রা আর কন্ট্রোলে আনা যায় না। মাঝখানে এসব বিষাক্ত ঔষধের ধাক্কায় ধীরে ধীরে ডায়াবেটিস রোগীদের কিডনী নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। আর কিডনী যেহেতু নষ্ট হওয়ার কারণে ঠিকমতো রক্ত পরিষ্কার করতে পারে না, ফলে রক্ত বিষাক্ত হয়ে পড়ার কারণে রক্ত চলাচলের সাথে বেশী সম্পর্ক আছে, এমন অঙ্গগুলোও ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়তে থাকে (যেমন- হৃদপিন্ড, ব্রেন, চোখ ইত্যাদি)। এই প্রসংগে বলতে হয় যে, হাত-পায়ের পচঁন বা গ্যাংগ্রিনেরও সবচেয়ে উৎকৃষ্ট চিকিৎসা আছে হোমিওপ্যাথিতে। অথচ অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডাক্তাররা গ্যাংগ্রিন হলে ঔষধে ভালো করতে না পেরে প্রথমে আঙুল কেটে ফেলে দেন, তারপর গ্যাংগ্রিন বাড়তে থাকলে পায়ের গোড়ালি পরযন্ত কেটে ফেলে দেন। তারপর গ্যাংগ্রিন আরো বাড়তে থাকলে হাঁটু পরযন্ত এবং শেষে কোমড় পরযন্ত পা কেটে ফেলে দেন। এভাবে দেখা যায় যে, দুই-তিনটি অপারেশনের ধাক্কা সামলাতে না পেরে গ্যাংগ্রিনের রোগীরা দুয়েক বছরের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অথচ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় কেবল মিষ্টি মিষ্টি ঔষধ মুখে খাওয়ার মাধ্যমেই খুবই কম সময়ে এবং কম খরচের মাধ্যমে গ্যাংগ্রিন সারিয়ে দেওয়া যায়।
রোগী অতীতে কি কি ঔষধ খেয়েছেন/ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, কি কি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেগুলো তার স্বাস্থ্যকে কিভাবে-কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, ইত্যাদি নিয়ে সাধারণত অন্যান্যপন্থী ডাক্তাররা মাথা ঘামান না। পক্ষান্তরে একজন হোমিও ডাক্তার রোগীর মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত, তার অতীত থেকে বর্তমান পরযন্ত, শরীরের বাহ্যিক রূপ থেকে মনের অন্দর মহল পরযন্ত সকল বিষয় বিবেচনা-পরযালোচনা করে হাজার হাজার হোমিও ঔষধ থেকে রোগীর জন্য সবচেয়ে মানানসই ঔষধ খুঁজে বের করে প্রয়োগ করেন। আর এই কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সবচেয়ে সহজে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মুল করা যায়। পরিশেষে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞসহ সকল মেধাবী ডাক্তারদের নিকট আমাদের অনুরোধ থাকবে, ডায়াবেটিসের অভিশাপ থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করতে তাঁরা যেন হোমিও ঔষধ প্রেসক্রাইব করেন।
ডাঃ বশীর মাহমুদ ইলিয়াস
লেখক, ডিজাইন স্পেশালিষ্ট, হোমিও কনসালটেন্ট
চেম্বার ঃ জাগরণী হোমিও হল
৪৭/৪ টয়েনবী সার্কুলার রোড (৩য় তলা),
(ইত্তেফাক মোড়ের পশ্চিমে এবং ষ্টুডিও ২৭-এর সাথে)
মতিঝিল, ঢাকা।
ফোন ঃ +৮৮০-০১৯১৬০৩৮৫২৭
E-mail : Drbashirmahmudellias@yahoo.com
Website : http://bashirmahmudellias.blogspot.com